HSC Islam Education 12th Week Assignment Answer 2022
(HSC) এইচএসসি ২০২২ ইসলাম শিক্ষা অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ১২তম সপ্তাহ
এইচএসসি (HSC) ইসলাম শিক্ষা ১২তম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট উত্তর ২০২২। এইচএসসি (HSC) অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর সমাধান ২০২২। HSC (Class 11-12) Assignment 2022. একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ২০২২ বারো সপ্তাহের জন্য। বাংলাদেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বর্তমানে ইন্টারনেটের এইচএসসি অ্যাসাইনমেন্ট সলিউশন ২০২২ পাওয়ার জন্য অনুসন্ধান করছে। ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার এসাইনমেন্ট PDF। HSC Assignment 2022 12th week. ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ১২তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট মাউশির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। Hsc Chemistry 1st Paper Assignment Answers 12th Week 2022, ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র Hsc ১২তম সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ২০২২।
এসাইনমেন্ট শিরোনামঃ
এসাইনমেন্ট শিরোনামঃ
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব এবং হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম আলােচনা এবং হালাল খাবার খাওয়ার সুফল সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রণয়ন
শিখনফল/বিষয়বস্তু :
- হালাল উপার্জন: গুরুত্ব,হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম
নির্দেশনা :
- হালাল উপার্জন সম্পর্কে বর্ণনা,
- হালাল উপার্জনের পদ্ধতি,
- হালাল উপার্জনের গুরুত্ব,
- হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম,
- হালাল খাবারের সুফল,
এসাইনমেন্টের উত্তর এখান থেকে শুরুঃ…….
তারিখ : –/—/২০২২ ইং । বরাবর , প্রধান শিক্ষক, সারগো এডুকেশন স্কুল , ঢাকা-১২০৭ , বাংলাদেশ । |
বিষয় : হালাল উপার্জনের গুরুত্ব এবং হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম আলােচনা এবং হালাল খাবার খাওয়ার সুফল সম্পর্কে’ বিষয়ক প্রতিবেদন। |
জনাব,
বিনতি নিবেদন এই যে , আপনার আদেশ নং বা.উ.বি.৩৫৫-১ তারিখ : –/—/২০২২ ইং অনুসারে উপরােক্ত বিষয়ের উপর আমার স্বব্যখ্যাত প্রতিবেদনটি নিন্মে পেশ করলাম ।
সূচনা:
হালাল উপার্জন সম্পর্কে বর্ণনা
হারাম বস্তু হালাল পন্থায় অর্জন করলেও তা যেমন হালাল হবে না, অনুরূপ হালাল বস্তু হারাম পন্থায় লাভ করলে তা–ও হালাল বা বৈধ হবে না।
হালাল উপার্জন অন্যতম ফরজ ইবাদত। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হালাল জীবিকা সন্ধান করা নির্ধারিত ফরজসমূহের পরে বিশেষ একটি ফরজ।’ (শুআবুল ইমান, বায়হাকি; কানযুল উম্মাল: ৯২০৩)। ‘সকল মুসলিম নারী ও পুরুষের ওপর হালাল উপার্জন ফরজ।’ (জামিউল আখবার: ১০৭৯)। ‘হালাল উপার্জন একটি জিহাদ।’ (কানযুল উম্মাল: ৯২০৫)।
হালাল ও সৎ উপার্জনের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বহস্তে উপার্জিত হালাল রিজিক আহার করল, সে বিদ্যুৎগতিতে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে।’ (জামিউল আখবার: ৩৯০)। ‘যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করে জীবন ধারণ করে, আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান এবং তাকে কখনো শাস্তি দেবেন না।’ (জামিউল আখবার: ১০৮৫)।
‘যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে হালাল রিজিক আহার করল, তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খোলা থাকবে, সে যেখান দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (জামিউল আখবার: ১০৮৭)। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করল, কিয়ামতের দিন সে নবীগণের সঙ্গে শামিল হবে এবং অনুরূপ পুণ্য লাভ করবে।’ (জামিউল আখবার: ১০৮৮)।
হালাল রিজিক ও সৎ উপার্জনের সব প্রচেষ্টাই ইবাদত। জীবিকার জন্য প্রিয় নবীজি (সা.) চাকরি করেছেন, ব্যবসা করেছেন। শ্রমিক তাঁর মনিবকে ফাঁকি দিলে তাঁর উপার্জন হালাল হবে না। মনিব তাঁর শ্রমিককে ঠকালে, ন্যায্য পাওনা না দিলে তাঁর সম্পদ হালাল হবে না। কর্মচারী মালিকের সঙ্গে প্রতারণা করলে তাঁর উপার্জন হালাল হবে না, মালিক তাঁর কর্মচারীর প্রতি জুলুম ও অবিচার করলে তাঁর সম্পদ হালাল হবে না।
ব্যবসায়ী পণ্যে ভেজাল দিলে, ওজনে বা পরিমাণে কম দিলে, নকল পণ্য বিক্রি করলে; মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিলে তাঁর উপার্জন হালাল হবে না। ক্রেতাও যদি কোনোভাবে বিক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করে, তবে তাঁর রিজিকও হালাল হবে না। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ওই সকল লোকের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ, যারা মানুষ থেকে গ্রহণ করার সময় ঠিকমতো নেয় এবং মানুষকে দেওয়ার সময় কম দেয়।’ (সুরা-৮৩ মুতাফ্ফিফিন, আয়াত: ১-২)।
সৎ ব্যবসায়ীদের প্রশংসায় প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক, শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজা)।
হালাল উপার্জনের পদ্ধতি
ইসলামে উপার্জনের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় দু’টি মূলনীতি রয়েছে।
এক. মূলগত: যা উপার্জন করা হবে তা মূলগতভাবে হালাল হতে হবে।
দুই. পদ্ধতিগত: যা উপার্জন করব তা বৈধ পন্থায় হতে হবে।
এক. মূলগত:
একজন ব্যক্তি যা উপার্জন করবে সে উপার্জেয় বস্ত্তটি অবশ্যই উত্তম ও হালাল হতে হবে। আর ইসলাম যাবতীয় কল্যাণকর ও হিতকর বস্ত্তকে মানবজাতির জন্য হালাল করেছে।
সেলক্ষ্যেই পবিত্র কুরআনে طيبات ও حلال শব্দের অবতারনা হয়েছে। মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সম্বোধন করে হালাল ও তাইয়্যিব যা রয়েছে তা থেকে আহার করতে বলেছেন। তিনি বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ كُلُواْ مِمَّا فِي ٱلۡأَرۡضِ حَلَٰلٗا طَيِّبٗا وَلَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوّٞ مُّبِينٌ ﴾[البقرة:168]
‘‘হে মানুষ! পৃথিবীতে হালাল ও তাইয়্যেব যা রয়েছে তা থেকে আহার কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না, নি:সন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
উপরোক্ত আয়াতের আলোকে বলা যায় যে, শুধুমাত্র হালাল হলেই চলবে না; বরং তা অবশ্যই তাইয়্যিব (পবিত্র ও উত্তম) হতে হবে। এখানে তাইয়্যিব বলতে ভেজালমূক্ত স্বাস্থসম্মত উদ্দেশ্য। অর্থাৎ এমন উপায় অবলম্বন করতে হবে যা মূলগত ভাবেই নির্ভেজাল, খাটি ও পবিত্র। অবশ্য অধিকাংশ মুফাস্সিরগণ আয়াতে হালাল শব্দ দ্বারা মূলগত বৈধতার এবং তাইয়্যিব দ্বারা পদ্ধতিগত বৈধতার অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং এ দু’শব্দ দিয়ে দু’টি মূলনীতির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।
দুই. পদ্ধতিগত
উপার্জনের ক্ষেত্রে গ্রহণীয় উপায় ও মাধ্যমটি অবশ্যই বৈধ পন্থায় হতে হবে। কেননা যাবতীয় অবৈধ উপায় ও পন্থায় অর্থসম্পদ উপার্জন করতে ইসলাম নিষেধ রয়েছে। পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতের মাধ্যমে এ বিষয়ে মুমিনগণকে সর্তক করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন:
ٓ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ إِلَّآ أَن تَكُونَ تِجَٰرَةً عَن تَرَاضٖ مِّنكُمۡۚ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ٢٩ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ عُدۡوَٰنٗا وَظُلۡمٗا فَسَوۡفَ نُصۡلِيهِ نَارٗاۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًا﴾
‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করোনা। কিন্তু তোমাদের পরস্পর রাযি হয়ে ব্যবসা করা বৈধ; এবং একে অপরকে হত্যা করিওনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে কেউ সীমালংঘন করে অন্যায়ভাবে তা করবে, তাকে আমি অগ্নিতে দগ্ধ করব, আর এটা করা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’’[2]
মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ وَلَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ وَتُدۡلُواْ بِهَآ إِلَى ٱلۡحُكَّامِ لِتَأۡكُلُواْ فَرِيقٗا مِّنۡ أَمۡوَٰلِ ٱلنَّاسِ بِٱلۡإِثۡمِ وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ﴾[النساء:29]
‘‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অবৈধ পন্থায় গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকগণের নিকট পেশ করো না।’
উপরোক্ত আয়াতদ্বয় দ্বারা সুষ্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় যে, উপার্জনের পদ্ধতি ও পন্থা অবশ্যই বৈধ হতে হবে। অন্যথায় কঠোর শাস্তির ঘোষনা রয়েছে। আর এ ধরনের উপায় জুলমের নামান্তর। যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। অতএব প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত উচিৎ উপার্জনের ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত দু’টি বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা।
প্রখ্যাত আধুনিক তাফসিরকার আল্লামা রশিদ রেজা আয়াতে উল্লেখিত হালাল ও তাইয়্যিবা এ দু’টি শব্দের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, কোন বস্ত্ত তাইয়্যিব বা উত্তম হওয়ার অর্থ হলো তাতে অন্যের অধিকার সম্পৃক্ত না থাকা। কেননা পবিত্র কুরআনে যেসব বস্ত্তর ব্যাপারে হারাম শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সেগুলো মূলগতভাবেই হারাম বা নিষিদ্ধ। একমাত্র নিরূপায় অবস্থা ছাড়া কোন অবস্থাতেই তার ব্যবহার বৈধ নয়। এ ছাড়াও এক ধরনের হারাম রয়েছে যা মূলগতভাবে হারাম নয় কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোন কারণে তাকে হারাম বলা হয়েছে। মূলত: এ জাতীয় বস্ত্তর বিপরীতেই তাইয়্যিব বা উত্তম শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং যেসব বস্ত্ত অন্যায়ভাবে উপার্জন করা হয়েছে, ন্যায়ানুগ পন্থায় করা হয়নি। যেমন: সুদ, ঘুষ, জুয়া, চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, ধোঁকা-প্রতারনা, আমানতের খিয়নত ইত্যাদি পন্থায় করা হয়েছে এগুলো হারাম। অর্থ্যাৎ এগুলো তাইয়্যিব বা উত্তম নয়। সারকথা প্রতিটি অপবিত্র বস্ত্তই হারাম, তা মূলগত কারণেই হোক কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোন কারণেই হোক।
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:
জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জনের গুরুত্ব ইসলামে যেমনি রয়েছে, ঠিক তেমনি হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও অত্যাধিক। ইসলাম মানুষের জন্য যাবতীয় জীবনোপকরণকে সহজসাধ্য, সুস্পষ্ট, ও পবিত্র করার নিমিত্বে সঠিক ও বৈজ্ঞানিক নির্দেশনা দিয়েছে। অতএব নির্দেশনা বহির্ভূত যাবতীয় উপার্জনই হারাম বা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত। ইসলামের বক্তব্য হল মানুষকে নিজের সার্মথ্য ও যোগ্যতানুযায়ী নিজেই নিজের প্রয়োজনীয় অর্থ ও দ্রব্য সামগ্রীর সন্ধান করবে। এটি মানুষের অন্যতম অধিকার। তবে ইসলাম মানুষকে এ অধিকার দেয়নি যে, সে অর্থ সম্পদ উপার্জনের জন্য স্বীয় খেয়ালখুশিমত যে কোন পন্থা অবলম্বন করতে পারবে। তাইতো ইসলাম অর্থসম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের পার্থক্য সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। সমাজ রাষ্ট্র ও ব্যাক্তির জন্য কল্যানকর যাবতীয় ব্যবস্থাকে ইসলাম হালাল করেছে। নিম্নে এ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হল:
এক. হালাল উপার্জন একটি অলঙ্ঘনীয় বিধান
ইসলাম মানুষের জন্য হালাল ও হারামের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য নিরূপন করেই শেষ করেনি, বরং হালাল উপার্জনে রয়েছে এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা। ফরজ ইবাদত সমূহের আদায়ের পর এ মহতি কর্মে ঝাপিয়ে পরতে উৎসাহিত করা হয়েছে। উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল ও বৈধ উপায় অবলম্বন করা ব্যবসায়ীসহ সকল মানুষের উপর ইসলামের একটি অলঙ্ঘনীয় বিধান। যারা উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল ও হারামের প্রশ্নে সতর্কতা অবলম্বন করে না তাদের ব্যপারে নবী করিম সতর্কবাণী করেছেন। তিনি বলেন:
«يأتي على الناس زمان، لا يبالي المرء ما أخذ منه، أمن الحلال أم من الحرام»
‘‘মানুষের নিকট এমন একটি সময় আসবে, যখন ব্যক্তি কোন উৎস থেকে সম্পদ আহরন করছে, তা হালাল না হারাম, সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করবে না।’’
দুই. হালাল উপার্জন দু’আ কবুলের পূর্বশর্ত
মানুষের প্রত্যহিক ও জাগতিক জীবনের চাহিদার কোন অন্ত নেই। তবে এগুলো মানুষের কাঙ্খিত ও বাঞ্চিত হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মহান স্রষ্ট্রার অনুগ্রহের, ভূমিকাই সবচেয়ে বেশী। আর এর জন্য প্রয়োজন একান্তে তাঁর দরবানে আরাধনা করা। মহান আল্লাহ ও মানুষে এ ব্যপারে সাড়া দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এটি অন্যতম ইবাদত ও বটে। রাসূল সা. বলেন :
«الدعاء هو العبادة»
‘‘দোয়া হচ্ছে ইবাদত’’ অতএব দু’আ ইসলামে অন্যতম একটি ইবাদতে পরিণত হয়েছে, যার মাধ্যমে বান্দার সাথে আল্লাহর গভীর প্রেম নিবেদন করা চলে এবং যাবতীয় প্রয়োজন পূনণে সহায়ক হয়। এ গুরুত্বপূর্ণ কর্মটি আল্লাহর দরবারে গৃহীত হতে হলে উপার্জন অবশ্যই হালাল হতে হবে। কেননা আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছুই গ্রহণ করেননা, অতএব অবৈধ উপার্জন যারা করে তাদের খাদ্যের উপার্জন হয় অবৈধ অর্থে হওয়ায় ইসলম যাবতীয় রক্ত গোশত সবই হারাম দ্বারা পুষ্ট হয়। ফলে এ ধরনের ব্যক্তির প্রার্থনাকে ইসলামে কখনো সমর্থন করেনা। এ মর্মে রাসূল সা. বলেন:
«إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: (يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ) [المؤمنون: 51] وَقَالَ: (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ) [البقرة: 172] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟»
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআল পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্ত্তই গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণের।’’ আল্লাহ তা’আলা বলেন : ‘‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসেবে দান করেছি।’’ অতঃপর রাসূল সা. এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছেঃ হে আমার প্রভূ! হে আমার প্রভূ! অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। তার প্রার্থনা কিভাবে কবুল হবে?’’
ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছেঃ
«تليت هذه الاية عند رسول الله ص ﴿يا أيها الناس كلوا مما في الأرض حللا طيبا﴾ فقام سعد بن أبى وقاص ، فقال : يا رسول الله صلى الله عليه وسلم، ادع الله أن يجعلني مستجاب الدعوة ، فقال له النبي صلى الله عليه وسلم : يا سعد أطب مطعمك تكن مستجاب الدعوة …»
‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একদা এ আয়াতটি তেলাওয়াত করা হল। ‘‘হে মানবমন্ডলী ! পৃথিরীর হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত-সামগ্রী ভক্ষন কর।’’ তখন সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লহর কাছে দু’আ করুন যেন আমার দু’আ কবুল হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে সা‘দ, তোমার পানাহারকে হালাল কর, তবে তোমার দু’আ কবুল হবে।’’
তিন. হালাল উপার্জনে বরকত লাভ হয়
উপার্জনে বরকত লাভ করতে হষে একমাত্র হালাল পন্থায় হতে হবে। কেননা বরকত দানের মালিক মহান আল্লাহ। তিনি শুধু বৈধ উপার্জনেকেই বরকত মন্ডিত করেন। এবং যাবতীয় অবৈধ উপার্জনের বারকত নষ্ট করে দেন। আর যেখানে অপচয় বৃদ্ধি পায়। ফলে সম্পদের প্রাচুর্যতা লাভে বিলম্ব হয়। অন্যদিকে হালাল উপার্জন কম হলেও তাতে বরকতের কারণে খুব স্বল্প সময়েই বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চার. হালাল উপার্জন জান্নাত লাভের একমাত্র উপায়
মানুষের দু’টি জীবন রয়েছে, একটি ইহলৌকিক, অপরটি পরলৌকিক। অতএব হালাল পন্থায় উপার্জনকারী পরকালে জান্নাতে যাবে। আর অবৈধ পন্থায় উপার্জনকারী ব্যাক্তি দুনিয়ার জীবনে সম্পদের পাহাড় গড়লেও পরকালীন জীবনে তার জন্য ভয়াবহ আযাব ও শাস্তি অপেক্ষা করছে।
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব
খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, মানুষের মৌলিক অধিকার। এগুলোর যোগান দিতে মানুষকে বেছে নিতে হয় সম্পদ উপার্জনের নানাবিধ পন্থা। জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ যেসব পেশা অবলম্বন করে তা হলো: কৃষি, ব্যবসা-বানিজ্য, চাকুরী, শিল্প প্রভৃতি। উপার্জনের মাধ্যম ব্যতীত কোন ব্যক্তির পক্ষেই উপর্যুক্ত মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। মানুষকে মহান আল্লাহ সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব হিসেবে সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হননি; বরং তাদের যাবতিয় মৌলিক অধিকারও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সে লক্ষে তিনি মহাশুণ্যের সব সৃষ্টিকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
﴿هُوَ ٱلَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي ٱلۡأَرۡضِ جَمِيعٗا ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰٓ إِلَى ٱلسَّمَآءِ فَسَوَّىٰهُنَّ سَبۡعَ سَمَٰوَٰتٖۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٞ ٢٩﴾ [البقرة:29]
‘‘তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের (ব্যবহারের জন্য) তৈরী করেছেন।’’
তবে এক্ষেত্রে তিনি মানুষকে দিয়েছেন পূর্ণ স্বাধীনতা যা তার ইখতিয়ারভুক্ত একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। ফলে প্রত্যেকে স্ব-স্ব যোগ্যতা, মেধা, শ্রম ও সময়ের যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যেমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রয়াস চালায়।
মানবজীবনে অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি মানুষের জীবন নির্বাহের অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে সমাদৃত, মানব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে পরিগণিত। মহান আল্লাহ মানুষকে এর গুরুত্ব অনুধাবন বোধগম্য করার নিমিত্তে পবিত্র কুরআনে সালাতের পাশাপাশি যাকাত তথা অর্থের উল্লেখ ৮২ স্থানে করেছেন। শুধু তাই নয়, মহান আল্লাহ অর্থনৈতিক বিধানও নির্দেশ করেছেন। ফলে কুরআনুল কারিমকে একটি অর্থবিদ্যার মহাকোষ বললেও অত্যুক্তি হবে না। মানুষ কিভাবে উপার্জন করবে, কোন পন্থায় তা ব্যয় করবে এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে যাবতীয় অর্জনীয় ও বর্জনীয় গুণাবলীর সম্পর্কে এর সুষ্পষ্ট নির্দেশনা বিদ্যমান। তাইতো ব্যক্তির উপার্জিত সম্পদে তিনি যাকাত ফরয করেছেন, যেন সম্পদ এক শ্রেণির লোকদের মাঝে সীমাবদ্ধ না থাকে। আল্লাহ তা‘আলা ফরয ইবাদত সমাপনান্তে জীবিকা নির্বাহে উপার্জন করার লক্ষ্যে যমিনে ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন:
﴿فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [الجمعة:10]
‘‘সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে, এবং আল্লাহকে অধিক স্মরন করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও।’’
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী (র.) বলেন:
فاذا فرغتم من الصلاة فانتشروا في الأرض للتجارة والتصرع في حوائجكم
‘‘যখন নামায শেষ হয়ে যাবে, তখন তোমরা ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও অন্যান্য পার্থিব প্রয়োজনাদি পূরণে বেড়িয়ে পড়ো[3]।’’
এখানে উপার্জনের একটি মূলনীতি সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়েছে। আর তাহলো এমন পন্থা অবলম্বন করতে হবে, যাতে আল্লাহর স্মরণে ব্রত থাকা যায়।
অতএব, যেসব পেশায় বা উপার্জনের পন্থায় আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইসলাম তা অবৈধ হিসেবে ঘোষনা করেছে। পবিত্র কুরআনে অন্যত্র এ বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়। সেটি হলো ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যদি কখনও আল্লাহর স্মরণে ব্রত হওয়ার আহবান আসে, তাহলে তখন যাবতীয় ব্যবসায়িক কর্ম পরিহার করা সকল ইমানদারদের জন্য ওয়াজিব।[4]
জীবিকা অর্জনের নিমিত্তে বিদেশে পাড়ি জমানোরও নির্দেশও রয়েছে এবং এটিকে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার সমপর্যায়ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَءَاخَرُونَ يَضۡرِبُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ يَبۡتَغُونَ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَءَاخَرُونَ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۖ﴾ [الجمعة:9]
‘‘আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে দেশভ্রমন করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে।’’[5]
أي مسافرين في الأرض يبتغون من فضل الله في المكاسب والمتاجر.
আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
‘‘অর্থ্যাৎ যারা ব্যবসা-বানিজ্য ও রিযিক উপার্জনের বিভিন্ন উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের অন্বেষায় পৃথিবীতে ভ্রমনরত।’’
তাছাড়া ব্যক্তি জীবনে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে উৎসাহিত করেছেন যে, ভিক্ষাবৃত্তিকে তিনি নিন্দা করেছেন। এ মর্মে যুবাইর ইবনে ‘আউয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لأن يغدو أحدكم، فيحطب على ظهره، فيتصدق به ويستغني به من الناس، خير له من أن يسأل رجلا، أعطاه أو منعه ذلك »
‘‘তোমাদের কেউ তার রশি নিয়ে চলে যাক, পিঠে কাঠের বোঝা বহন করে এনে বিক্রয় করুক এবং তার চেহারাকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচিয়ে রাখুক এটা তার জন্য মানুষের নিকট ভিক্ষা করা, চাই তাকে দান করুক বা না করুক তার চাইতে উত্তম।’’[7]
অতএব উপার্জন করার মনোবৃত্তি ব্যতিরেকে যারা ভিক্ষাবৃত্তিতে প্রবৃত্ত হয় তাদের এ ধরনের পেশাকে অবৈধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ما يزال الرجل يسأل الناس، حتى يأتي يوم القيامة ليس في وجهه مزعة لحم»
‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ায় সে কিয়ামতের দিন এমন অরস্থায় আগমন করবে যে, তার মুখমণ্ডলে এক টুকরো গোশতও থাকবে না।[8]’’ ইসলাম মানবতার ধর্ম। দুস্থ মানবতার সেবায় দান করার রীতি ইসলামে চালু আছে। তবে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে ইসলাম অনুমোদন দেয় নি। বরং একে বার বার নিরুৎসাহিত করেছে যা, নিষেধের পর্যায় পৌঁছে গিয়েছে।
উপার্জনের ক্ষেত্রে ইসলাম নিজ হাতে উপার্জন করাকে সর্বোত্তম উপার্জন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ মর্মে হাদীসে এসেছে:
عن رافع بن خديج، قال: قيل: يا رسول الله، أي الكسب أطيب؟ قال: «عمل الرجل بيده وكل بيع مبرور»
হযরত রাফে ইবনে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, সর্বোত্তম উপার্জন কোনটি? জবাবে তিনি বলেন: ব্যক্তির নিজস্ব শ্রমলব্দ উপার্জন ও সততার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয়।’’[9]
নবী রাসূলগণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তাঁরা নিজ হাতে কর্ম সম্পাদনকে অধিক পছন্দ করতেন। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে প্রাথমিক সময়ে ছাগল চড়ানো ও পরবর্তীতে খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার ব্যবসায়িক দায়িত্ব পালনের বর্ণনা পাওয়া যায়, যা নিজ হাতে জীবিকা নির্বাহে উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে।
হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম
হালাল উপার্জন ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে যেমন বিরাট নেয়ামত, ঠিক তেমনি হারাম উপার্জনের প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক।
হারাম উপার্জনের ফলে আল্লাহতায়ালা মানবজীবন থেকে সব ধরনের বরকত ছিনিয়ে নেন। রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে।প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। আর্থিক অভাব অনটন ও সংকট নেমে আসে।
এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। ইসলাম মনে করে, আধ্যাত্মিকতার জন্য হালাল খাবার হচ্ছে সর্ব প্রথম ধাপ। সুতরাং মানুষকে আধ্যাত্মিকতা অর্জন করতে হলে অবশ্যই হালাল রুজি-রোজগার করার পাশাপাশি তাকে অবশ্যই পবিত্র ও হালাল খাদ্য খেতে হবে।
পবিত্র কোরআন-হাদিস এবং নবী-রাসূল ও ইসলামি স্কলাররা সর্বদা হালাল উপার্জন ও হালাল খাদ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
তাদের অভিমত হলো- সর্বদা হালাল রুজি অর্জন করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। কেননা তা মানুষকে ধার্মিক হিসেবে বাঁচতে সাহায্য করে।
কোরআনে কারিমের সূরা মায়েদার ৮৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ওই সব সুস্বাদু বস্তু হারাম করো না, যেগুলো আল্লাহ তোমাদের জন্যে হালাল করেছেন এবং সীমা অতিক্রম করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না। ’
এই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে এসেছে, একদিন হজরত মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশ্যে কিয়ামতের বর্ণনা প্রসঙ্গে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সাহাবিরা রাসূলে খোদার বর্ণনা শুনে এতো বেশি আলোড়িত হলো এবং কান্নাকাটি করলো যে, সিদ্ধান্তই নিয়ে নিলো ভালো খাবার দাবার ছেড়ে দেবে। আরাম-আয়েশ, নিজের সুখ শান্তিকে হারাম করে ফেলবে। রাতগুলো ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দেবে। দিনের বেলা রোজা রাখবে, দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী সঙ্গ ত্যাগ করবে এমনকি এই সিদ্ধান্তের ওপর তারা স্থির অবিচল থাকবে বলে শপথও নিয়েছিল।
নবী করিম (সা.) এই খবর শুনতে পেয়ে লোকজনকে মসজিদে সমবেত করে বললেন, আমাদের দ্বীন ইসলাম সংসারত্যাগী বৈরাগ্যদের দ্বীন নয়। আমি আল্লাহর রাসূল হওয়ার পরও ঘর এবং পরিবারের কাছ থেকে পৃথক হইনি। তাদের সঙ্গে খাবার খাই, আমার স্ত্রীদের সঙ্গে দাম্পত্য জীবনযাপন করি। জেনে রেখো, যে আমার পদ্ধতির বাইরে যাবে সে মুসলমান নয়।
এ আয়াতে জীবনের ভারসাম্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে। আল্লাহ তোমাদের ওপর যা কিছু হারাম করেছেন, সেগুলো করা জায়েজ নয়। আবার যেসব বিষয় তোমাদের ওপর হালাল করা হয়েছে সেগুলোকে হারাম করাও জায়েজ নয়। মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ নিষেধের প্রতি আত্মসমর্পিত এবং আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যেই পদচারণা করে। না তার চেয়ে অগ্রবর্তী হবে না পশ্চাৎবর্তী। মানুষ যে হালালকে নিজেদের জন্যে হারাম করে নিচ্ছে, তা এক ধরনের আগ্রাসন এবং ঐশী সীমা লঙ্ঘনের শামিল। এ আচরণ ঈমানের আত্মার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বস্তুত খাদ্য সামগ্রী, পানীয় সামগ্রী এবং হালাল ভোগ্যবস্তুগুলোকে আল্লাহ মুমিনদের জন্যে দিয়েছেন। তাই এগুলোকে পরিত্যাগ করা ঐশী রহমত ও দয়ার প্রতি ভ্রুক্ষেপহীনতার শামিল।
ইসলাম মানব স্বভাবসিদ্ধ একটি ধর্ম, তাই পবিত্র জিনিসগুলোকে ত্যাগ করা মানব স্বভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ইসলামে সবধরনের উগ্রতা নিষিদ্ধ, এ দু’টি আচরণই ঐশী সীমা লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। হালালকে হারাম করা যেমন জায়েজ নয় তেমনি হারামকে হালাল করা জায়েজ নয়। এসব বিধান আল্লাহর হাতে, মানুষের হাতে নয়।
হালাল বস্তুগুলো থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। সেই সঙ্গে হালাল বস্তুগুলো থেকে উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি কিংবা অপচয় করাটাও উচিত নয়।
যা সূরা মায়েদার ৮৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা যেসব বস্তু তোমাদেরকে দিয়েছেন, তন্মধ্য থেকে হালাল ও পবিত্র বস্তু খাও এবং আল্লাহকে ভয় করো, যার প্রতি তোমরা বিশ্বাসী। ’
বর্ণিত আয়াতদ্বয়ে পার্থিব জগতের হালাল ভোগ্যবস্তু থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে নিষেধ করার পাশাপাশি হালাল এবং পবিত্র বিষয়গুলো ব্যবহার করার আদেশ দিয়ে বলা হচ্ছে- ভেবো না পার্থিব জগতের কল্যাণগুলোকে কাজে লাগানো অপছন্দনীয় কিংবা নিন্দনীয় কোনো কাজ। বরং পার্থিব জগতের সব নিয়ামতই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্যে দেওয়া রিজিক। তিনিই এগুলো তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। অতএব তোমরা এসব সুযোগ-সুবিধাকে নিজেদের কল্যাণে ব্যবহার করবে- এটাই সঙ্গত।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো- এসব কল্যাণময় নিয়ামতকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে ন্যায়, ভারসাম্য এবং তাকওয়ার মানদণ্ড মেনে চলতে হবে। কোরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন খাও এবং পান করো। তবে অপচয় করো না। আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, খাও এবং যথার্থ কাজ করো, খাও এবং অন্যদেরকেও খাওয়াও।
এ আয়াতের শিক্ষণীয় বিষয় হলো-
ক. পার্থিব সুযোগ-সুবিধাগুলো অর্থাৎ ঐশী নিয়ামতগুলো থেকে উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে ঈমানদার এবং তাকওয়ার মানদণ্ড মেনে চলা জরুরি।
খ. তাকওয়া মানে পৃথিবী অর্থাৎ পার্থিব জগতকে উপেক্ষা করা নয় বরং পার্থিব জগতকে যথার্থভাবে ব্যবহার করা পরকালীন কল্যাণের জন্যে।
হালাল খাবারের সুফল
১. হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে সব উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করেছেন তাকে হারাম সাব্যস্ত করো না এবং সীমালংঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের ভালোবাসেন না। আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে হালাল, উৎকৃষ্ট বস্তু খাও এবং যেই আল্লাহর প্রতি তোমরা ঈমান রাখ তাকে ভয় করে চলো। -সূরা মায়েদা: ৮৭-৮৮
২. হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদি ও লটারির তীর এসবই অপবিত্র, শয়তানি কাজ। সুতরাং এসব পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করো। শয়তান তো মদ জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের বীজ বপণ করতে চায় এবং চায় তোমাদেরকে আল্লাহর জিকির ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে। সুতরাং বলো, তোমরা কি (ওইসব জিনিস থেকে) নিবৃত্ত হবে? -সূরা মায়েদা: ৯০-৯১
৩. সুতরাং এমন সব (হালাল) পশু থেকে খাও, যাতে আল্লাহ নাম নেওয়া হয়েছে- যদি তোমরা সত্যিই তার নিদর্শনাবলীতে ঈমান রাখো। -সূরা আনআম: ১১৮
৪. তোমাদের জন্য এমন কী বাঁধা আছে, যদ্দরুন তোমরা যে সকল পশুতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে তা থেকে খাও না? অথচ তিনি তোমাদের জন্য (সাধারণ অবস্থায়) যা কিছু হারাম করেছেন তা তিনি তোমাদেরকে বিশদভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তবে তোমরা যা খেতে বাধ্য হয়ে যাও (তার কথা ভিন্ন, হারাম হওয়া সত্ত্বেও তখন তা খাওয়ার অনুমতি থাকে)। বহু লোক কোনো রকমের জ্ঞান ছাড়া (কেবল) নিজেদের খেয়ালখুশির ভিত্তিতে অন্যদেরকে বিপদগামী করে। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক সীমালংঘনকারীদের সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। -সূরা আনআম: ১১৯
৫. যে পশুতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, তা থেকে খেয়ো না। এরূপ করা কঠিন গোনাহ। (হে মুসলিমগণ!) শয়তান তার বন্ধুদেরকে তোমাদের সঙ্গে বিতর্ক করার জন্য প্ররোচণা দিতে থাকে। তোমরা যদি তাদের কথামতো চলো- তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে। -সূরা আনআম: ১২১
৬. (হে নবী! তাদেরকে) বলো, আমার প্রতি যে অহি নাজিল করা হয়েছে তাতে আমি এমন কোনো জিনিস পাই না, যা কোনো আহারকারীর জন্য হারাম, যদি না তা মৃত জন্তু বা বহমান রক্ত কিংবা শোকরের গোশত হয়। কেননা তা নাপাক। অথবা যদি হয় এমন গোনাহের পশু, যাকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে জবেহ করা হয়েছে। হ্যাঁ যে ব্যক্তি বাধ্য হয়ে যায়, আর তার উদ্দেশ্য স্বাদ আস্বাদন না হয় এবং প্রয়োজনের সীমালংঘন করে না, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা আনআম: ১৪৫
হালাল খাবার গ্রহণ আর হারাম খাবার বর্জন ইসলামের অতিব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। মানুষ আল্লাহর দাস। যেভাবে নামাজ দ্বারা মানুষের দাসত্ব প্রকাশ করতে হয় সেভাবে হালাল খাবার খেয়ে আর হারাম খাবার বর্জন করেও দাসত্ব প্রকাশ করতে হয়। নিজের ইচ্ছা হলেই কোনো কিছু খাওয়া যাবে না। আগে জানতে হবে, এ খাবার আমার জন্য হালাল কিনা।
আবার সাধনার নামে সিদ্ধি অর্জনের উদ্দেশ্যে মনগড়াভাবে কোনো হালাল খাবারকে বর্জন করা যাবে না। নিজের আগ্রহ বিসর্জন দিয়ে প্রভুর দেওয়া সীমানা মেনে হারাম গ্রহণ না করা আর হালাল না ছাড়ার মধ্য দিয়েই একজন দাসের প্রকৃত দাসত্ব ফুঁটে উঠবে। তাই একজন ঈমানদারের জন্য হালাল খাবার গ্রহণ আর হারাম খাবার বর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় বিধান। এটা ইসলামের ধর্মের অপরিহার্য অবিচ্ছেদ্য অংশ।
হালাল খাবারকে হারাম সাব্যস্ত করার কয়েকটি পর্যায় আছে। এক. কোনো হালাল খাবারকে হারাম বিশ্বাস করা। দুই. কোনো হালাল খাবার বর্জনের শপথ করা। তিন. কোনো হালাল খাবার বর্জনকে উত্তম বা পূন্যের কাজ মনে করা। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো হালাল খাবারকে হারাম বিশ্বাস করে তবে সে ঈমানহারা হয়ে যাবে কাফের হয়ে যাবে। আর যদি কোনো হালাল খাবার বর্জনের শপথ করে তবে তার জন্য এ শপথ ভঙ্গ করে সেই খাবার খাওয়া ওয়াজিব এবং শপথ ভঙ্গের কাফফারা প্রদান করাও ওয়াজিব।
আর যদি কেউ কোনো হালাল খাবারকে হারাম বিশ্বাস করলো না কিন্তু তা বর্জন করাকে উত্তম বা সওয়াবের কাজ মনে করে তবে সে নিকৃষ্টতম বিদআতে লিপ্ত হলো। যেমন- অমুসলিম আহত হবে এ কথা ভেবে কেউ যদি গরুর গোশত না খাওয়াকে শ্রেয় মনে করল তাহলে সে বিদআত করল। আবার কোনো রোগের কারণে বিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে যদি কোনো হালাল খাবার বর্জন করা হয় তবে এতে কোনো সমস্যা নেই।
হালাল খাবারকে হারাম সাব্যস্ত করার পর্যায় হলো- আল্লাহর দেওয়া সীমালংঘন করা। মদ ইসলামের বিধানমতে হারাম খাবার। জুয়ার উপার্জনও হারাম। চাই তা রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যায়ে অনুমোদিত হোক অথবা অনুমোদনবিহীন ব্যক্তিগত পর্যায়ে হোক। ভাগ্য যাচাইয়ের নামে কিছু মানুষকে বঞ্চিত করে কিছু মানুষকে বেশি প্রদানের যত পদ্ধতি আছে তা সবই জুয়া। ‘যদি লাইগ্যা যায়’ জুয়ার একটি মুখরোচক স্লোগান আমাদের দেশে প্রচলিত আছে। সরকারিভাবেও আমাদের দেশে জুয়ার অনেক আয়োজন আছে। মুসলমানমাত্রই এগুলো থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকতে হবে। প্রতিমার বেদিতে যে সব খাবার রাখা হয় সেগুলোও মুসলমানদের জন্য হারাম। অনেক মুসলমানকে দেখা যায় অন্য ধর্মের পূজার প্রসাদ খেতে। পূজার প্রসাদ প্রতিমার বেদিতে উৎসর্গিত- তাই তা মুসলমানের জন্য হালাল নয়।
প্রতিবেদকের নাম : আরাফাত হোসেন রোল নং : ০১ প্রতিবেদনের ধরন : প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় : হালাল উপার্জনের গুরুত্ব এবং হারাম উপার্জনের কুফল ও পরিণাম আলােচনা এবং হালাল খাবার খাওয়ার সুফল সম্পর্কে’ বিষয়ক প্রতিবেদন। প্রতিবেদন তৈরির স্থান : ঢাকা তারিখ : –/—/২০২২ ইং । |
এসাইনমেন্টের উত্তর এখানে শেষ…….
বিশেষ সতর্কতা: উপরোক্ত নমুনা উত্তরগুলো দেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হল, শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত বিষয়ের উপর ধারণা দেওয়া। ধারণা নেওয়ার পর অবশ্যই নিজের মত করে এসাইনমেন্ট লিখতে হবে। উল্লেখ্য যে, হুবহু লেখার কারণে আপনার উত্তর পত্রটি বাতিল হতে পারে। এ সংক্রান্ত কোন দায়ভার সারগো আইটি-এর নয়।
আমাদের কাজের মধ্যে কোন প্রকার ভুল ত্রুটি দেখা গেলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানান। প্রতি সপ্তাহের সকল বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। আমাদের কাছ থেকে ন্যূনতম সাহায্য পেয়ে থাকলে আপনাদের অন্যান্য বন্ধুদের সাথে ওয়েবসাইটটিকে ফেসবুকে শেয়ার দিতে পারেন।